নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংকিং খাতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে। এই আইনের মাধ্যমে দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে আরও শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও সংগঠিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
গভর্নর জানান, সরকার চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে ছয়টি নতুন আইন প্রণয়ন করেছে, যার মধ্যে ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ও ব্যাংক কোম্পানি অ্যাক্ট সংশোধনের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে।
নতুন আইন অনুযায়ী পরিচালকদের পদাধিকার নির্দিষ্টকরণে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। একটানা ১২ বছর পর্যন্ত পরিচালকের আসন থাকার পরিবর্তে মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬ বছরে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি বোর্ডে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০% করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা পরিবারতন্ত্র কমিয়ে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে।
ব্যক্তিগত লকার সেবার ওপরও কঠোর বিধান এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আর ব্যক্তিগত লকার থাকবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর। কিছু লকার বর্তমানে ফ্রিজ হওয়ায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব না হলেও, ফ্রিজ উঠলেই লকার পরিষেবা বন্ধ করা হবে। ভবিষ্যতে যারা লকার ব্যবহার করতে চান, তাদের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর দোরগোড়ায় যেতে হবে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ঋণ ব্যবস্থাপনায় নতুন নিয়ম কার্যকর হচ্ছে। ঋণ শ্রেণিকরণ ও পরিশোধের সময়সীমা ৬ ও ৯ মাস থেকে তিন মাসে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে, যা ঋণের মান নিয়ন্ত্রণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তবে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে ব্যাংকগুলোর বড় অংকের অর্থ আটকে থাকার সমস্যা রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই ধরনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পুরনো ১৫ বছরের বেশি অনশোধিত ঋণের পুনর্বিন্যাস বন্ধ করতে ‘ব্যাংক রেজুলেশন বিভাগ’ গঠন করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে একীভূত ও পুনর্মূল্যায়ন করবে। এছাড়া পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে চারটি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ১১টি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ধরে রাখা হয়েছে, যা মুদ্রানীতি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলে সুদের হার কমানোর প্রস্তাবও নেওয়া হবে।
এই সব পদক্ষেপ দেশের ব্যাংকিং খাতকে আরও স্বচ্ছ, স্থিতিশীল ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
মো: জাহিদ/
ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট চালু: ব্যাংকিং খাতে বড় পরিবর্তন আসছে
- আপলোড সময় : ০৩-০৮-২০২৫ ০১:০৯:৪৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৮-২০২৫ ০১:০৯:৪৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ